শিক্ষার্থীদের জন্য ১০টি আকর্ষণীয় ব্লকচেইন প্রোজেক্টের ধারণা (২০২৩)

বর্তমানে ব্লকচেইন ডেভেলপমেন্টের উচ্চ চাহিদা থাকায় আপনি কিন্তু কিছু অনন্য ব্লকচেইন প্রকল্প প্রদর্শন করে, সফটওয়্যার দুনিয়ায় একজন যোগ্য প্রার্থী হিসাবে নিজের প্রতিভা প্রদর্শন করতে পারেন। শুধুমাত্র সাধারণ মোবাইল বা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করার পরিবর্তে, একটি বিদ্যমান অ্যাপ্লিকেশনে ব্লকচেইন প্রযুক্তি যোগ করে আপনি কিন্তু আপনার দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারেন। ক্ষেত্রটিতে তেমন প্রতিযোগিতা না থাকায় এখানে সুযোগের অভাব নেই, তার সাথে ব্লকচেইন প্রকল্পগুলোতে আপনার উদ্ভাবন এবং সৃজনশীলতাও কিন্তু বেশ প্রশংসিত হবে।

কিভাবে একটি ব্লকচেইন প্রকল্প তৈরি করবেন?

প্রথমত, আপনার একটি ব্যক্তিগত ব্লকচেইন প্রয়োজন যার জন্য আপনি গ্রেনচে (Grenache) ব্যবহার করতে পারেন। গ্রেনচে ইনস্টল করার পরে আপনার একটি ব্লকচেইন সিস্টেম চালু হবে। তার পাশাপাশি আপনার Ethereum স্মার্ট চুক্তি লিখতে একটি truffle ফ্রেমওয়ার্ক প্রয়োজন পড়বে। মনে রাখবেন যে আপনি যদি আপনার স্থানীয় অপারেটিং সিস্টেমে এটি ইনস্টল করতে না চান তাহলে অনলাইন রিমিক্স বা IDE ব্যবহার করতে পারেন। সিস্টেম ব্লকচেইন প্রজেক্ট তৈরির পরবর্তী ধাপ হলো একটি মেটা মাস্ক ক্রোম এক্সটেনশন ইনস্টল করা। এটি আপনাকে আপনার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ব্লকচেইনের সাথে সংযোগ করতে এবং স্মার্ট চুক্তিগুলির সাথে যোগাযোগ করতে সাহায্য করবে। 

১০ টি সেরা ব্লকচেইন প্রকল্পের ধারণা

স্মার্ট চুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বস্ত ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম (Trusted Crowdfunding Platform Using a Smart Contract)

আজ অবধি, ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্মের জবাবদিহিতা এবং বিশ্বাস নিয়ে মানুষের মাঝে অনেক প্রশ্ন  রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে, বিনিয়োগকারীদের অর্থ ভুল খাতে চলে গেছে এবং অপব্যবহার হয়েছে।

একটি ব্লকচেইন-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম এই ফিল্ডকে পুরো পরিবর্তন করে দিতে পারে। ব্লকচেইন প্রযুক্তির সাহায্যে, বিনিয়োগকারীরা এখন জানতে পারে টাকা কার কাছে যাচ্ছে এবং কীভাবে তারা তা খরচ করছে। 

চালানের সঠিক ডেটা (Exact Shipment Location Data)

বেশিরভাগ লজিস্টিক কোম্পানিগুলো, চালান বা প্যাকেজের শুধুমাত্র প্রধান অবস্থানের বিবরণ যেমন সংগ্রহ কেন্দ্র, শহরের কেন্দ্র এবং বাছাই করার সুবিধাগুলি অফার করে থাকে । সঠিক লাইভ অবস্থানের বিবরণ কখনই জানা যায় না, এবং যদি কোনোভাবে সিস্টেম ক্রাশ  করে তবে সম্পূর্ণ ডেটা হারিয়ে যায়।

ব্লকচেইন ব্যবহার করে, আপনি এমন একটি সিস্টেম বাস্তবায়ন করতে পারেন যার মাধ্যমে চালানের সমস্ত ডেটা সরাসরি  গ্রাহকদের কাছে চলে যাবে।

পিয়ার টু পিয়ার রাইড শেয়ারিং (Peer To Peer Ridesharing) 

বেশিরভাগ রাইড শেয়ারিং প্লাটফর্মে একটি এজেন্সি বা প্রতিষ্ঠান থাকে, যেমন উবার, পাঠাও ইত্যাদি। 

ব্লকচেইনের মাধ্যমে কোনো মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই, রাইডার এবং ড্রাইভার উভয়ই সরাসরি সংযুক্ত হতে পারবে। প্রকল্পটি সফলভাবে সম্পন্ন হলে, এটি এমন একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করবে যা হবে নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য।

একটি জাল পণ্য সনাক্তকারী সিস্টেম (A Fake Product Identification System) 

মানুষ এখন তাদের স্মার্টফোনের মাধ্যমে QR কোড স্ক্যান করে কোনো পণ্য আসল না নকল তা সাথেসাথেই জানতে পারছে। স্ক্যান করা QR কোডটি  ব্লকচেইন ডাটাবেসের এন্ট্রিগুলির তুলনা করে, গ্রাহককে জানিয়ে দিচ্ছে পণ্যটি আসল না নকল। এটি ব্লকচেইনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি । আপনি ব্লকচেইনে এই প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে, বড় ব্র্যান্ডে আপনার নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বাড়বে।

ব্লকচেইন-ভিত্তিক ভোটিং সিস্টেম (Blockchain-Based Voting System)

ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেমগুলো কাগজ-ভিত্তিক সিস্টেমগুলিকে প্রতিস্থাপন করলেও তার ক্ষমতা ও সুরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে মানুষের মাঝে অনেক সন্দেহ রয়েছে। 

ব্লকচেইন ভিত্তিক ভোটিং সিস্টেমের মাধ্যমে দেশে স্বচ্ছ ও জনসমক্ষে যাচাইযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা যাবে। এই প্রকল্প সফলভাবে প্রয়োগ করা গেলে , ব্লকচেইন সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন দিয়েও ভোটদান করা যাবে।

স্বচ্ছ এবং প্রকৃত দাতব্য সংস্থা এবং অর্থের যথাযথব্যবহার (Transparent and Genuine Charity Application) 

অনেক ভুয়া দাতব্য প্রতিষ্ঠান প্রকৃত পরিচয় না দিয়ে, দাতব্য প্রতিষ্ঠানের নামে নিরীহ মানুষের কাছ থেকে অর্থ লুট করে। বেশির ভাগ মানুষ দাতব্য কাজের জন্য অর্থ দান করতে চায়, কিন্তু দানক্রীত অর্থ দরিদ্রদের হাতে পৌঁছাবে কিনা তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। ব্লকচেইন সিস্টেম অনলাইন দাতব্য সংস্থায় স্বচ্ছতা আনতে পারে। অবদানকারীরা রিয়েলটাইমে অনুদানের অর্থ ট্র্যাক করতে পারবে এবং নিশ্চিত করতে পারবে যে এটি প্রাপ্য হাতে পৌঁছেছে কি না।

একটি ডিসেন্ট্রালাইজড ওয়েব হোস্টিং সিস্টেম (A Decentralized Web Hosting System)

ব্লকচেইনের সাহায্যে, আপনি আপনার ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তুকে গ্রানুলে (granules)  বিভক্ত করতে পারেন এবং এটি সমগ্র ইন্টারনেটে বিতরণ করবে, তারপর একটি ব্লকচেইন রেজিস্ট্রি ব্যবহার করে তাদের একসাথে লিঙ্ক করে দিবে। 

ব্লকচেইন প্রযুক্তি ওয়েব ডিজাইনারদের সেন্ট্রালাইজড সার্ভারের উপর নির্ভর না করে স্বাধীনভাবে ওয়েবসাইট বিকাশের অনুমতি দেয়, যা সময় এবং অর্থ উভয় বাঁচায়। ব্লকচেইন ভল্ট আপনাকে আপনার প্রয়োজনীয় সমস্ত সামগ্রী পুনরায় একত্রিত করতে সহায়তা করবে। একটি কেন্দ্রীয় সার্ভারের উপর অনির্ভরতার মানে হল যে, সার্ভার ব্যর্থ বা বিপর্যস্ত হওয়ার মতো কোন ঘটনা আপনার সাথে ঘটবে না।

ডিস্ক স্পেস ভাড়া সিস্টেম (Disk Space Renting System)

 ব্লকচেইন রেজিস্ট্রির মাধ্যমে প্রত্যেককে একটি অব্যবহৃত ডিস্ক স্পেস ভাড়া দেয়া যা বিশ্বব্যাপী একটি বিশাল  ক্লাউড তৈরি করবে। 

এই প্রকল্পে, ব্লকচেইন ডেটা স্ট্রাকচার একক-পয়েন্ট-অফ-ফেইলর এর ঝুঁকি হ্রাস করে, নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করে। তাছাড়াও এটি অননুমোদিত অ্যাক্সেস এড়ায়, কারণ ব্লকচেইনের প্রতিটি ব্যবহারকারীর কাছে তাদের কী(key) রয়েছে।

লয়ালিটি বা আনুগত্য পয়েন্টের এক্সচেঞ্জ সিস্টেম(Loyalty Points Exchange System) 

ব্লকচেইনের মাধ্যমে, আপনি এমন একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেন যেখানে গ্রাহকদের ডেটা একত্রিত করে, স্বচ্ছভাবে আনুগত্য পুরস্কার বা লয়ালিটি পয়েন্ট দেয়া হবে

খাদ্যের উৎসের ট্র্যাকব্যাক (Trackback Food Sources)

ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে, আপনি এমন একটি সিস্টেম বাস্তবায়ন করতে পারেন, যা ভোক্তাদের তাজা পণ্য বা মাংসের উৎসের সঠিক সন্ধান দিবে। এর ফলে ভোক্তারা অনেক বেশি আস্থার সাথে পণ্যটি কিনতে পারবেন।

আশা করি এই ব্লগটি বাস্তব জগতে ব্লকচেইনের বিস্তৃত অ্যাপ্লিকেশনের উপর কিছুটা আলোকপাত করতে সক্ষম হয়েছে।  প্রকল্পগুলোর মাঝে আপনার কোনটি সবচেয়ে ভালো লেগেছে জানাতে ভুলবেন না ।।