পোর্টফোলিও ; আপনার যে দক্ষতাগুলো রয়েছে, তা বাস্তবে সবার সামনে তুলে ধরতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে প্রতিটি মানুষেরই তার দক্ষতা উপস্থাপনের জন্য পোর্টফোলিও থাকা উচিত। কিন্তু, আপনি আপনার এই পোর্টফোলিওসমূহ অন্যদের নিকট তুলে ধরার জন্য কোথায় সংরক্ষণ বা হোস্ট করে রাখতে পারেন? আজকে আমরা এই নিবন্ধটিতে সে বিষয়েই আলোচনা করবো।
সকলের সাথে আপনার পোর্টফোলিও শেয়ার করতে পারার আরো কিছু সুবিধা হলো, এর সাহায্য আপনি আপনার ডেটা বিষয়ক জ্ঞান বৃদ্ধি এবং আপনার নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারবেন। এই কারণে, আপনার প্রোজেক্টগুলো নিয়ে, যত বেশি সম্ভব তত মানুষের সাথে শেয়ার বা আলোচনা করা উচিত। বর্তমানে পোর্টফোলিও হোস্ট করার প্রচুর বিকল্প রয়েছে। তাদের মধ্যে ৫ টি সেরা প্ল্যাটফর্ম এবং ওয়েবসাইট নিয়ে আজকে আমরা আলোচনা করবো।
১। ডেটাক্যাম্প ওয়ার্কস্পেস
ডেটাক্যাম্প ওয়ার্কস্পেস একটি সহযোগিতামূলক ক্লাউড-ভিত্তিক ওয়ার্কস্পেস। যা আপনাকে ডেটা অ্যানালাইস বা বিশ্লেষণ করতে, অন্যদের সাথে সে বিষয়ে আলোচনা করতে, তাৎক্ষণিকভাবে সকলের নিকট তা প্রকাশ করার সুযোগ দিয়ে থাকে। এছাড়াও, ডেটাক্যাম্প আপনাকে ২০ টিরও বেশি প্রি-লোডেড ডেটাসেট এবং কোডিং টেমপ্লেট প্রদান করে থাকে। যা থেকে আপনারা গুরুত্বপূর্ণ ইনসাইট বের করে, তা আপনার পোর্টফোলিওতে যুক্ত করতে পারেন।
ডেটাক্যাম্প ওয়ার্কস্পেস পাইথন, আর এবং এসকিউএল ভাষার সাথে সব ধরনের অপারেটিং সিস্টেম সাপোর্ট করে থাকে। তাছাড়া, ডেটাক্যাম্প ওয়ার্কস্পেসে কাজ করতে আপনার কোনো রকম ইন্সটলেশন বা ডাউনলোডের প্রয়োজন হয় না। আপনি আপনার পোর্টফোলিও ফোল্ডারটির লিংক ডেটাক্যাম্প প্রোফাইলে অ্যাড করে রাখলেই, তার সাহায্যে আপনি সকলের সাথে আপনার পোর্টফোলিও শেয়ার করতে পারবেন।
২। Kaggle
মেশিন লার্নিং এবং ডেটা সায়েন্স বিষয়ক উৎসাহী মানুষদের জন্য Kaggle একটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম। Kaggle এর কমিউনিটিটি আপনাকে অন্যান্য ডেটা সাইন্টিস্টদের সাথে খুবই সহজে যোগাযোগ এবং তাদের সহযোগে বিভিন্ন ধরনের প্রোজেক্ট বা সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, আপনি আপনার ডেটাসেট, নোটবুক, প্রোজেক্ট ইত্যাদি Kaggle এর সাহায্য সকলের নিকট প্রকাশ করতে পারবেন। Kaggle আপনাকে বিভিন্ন রকমের ডেটাসেট দিয়েও সাহায্য করে থাকে। যা আপনাকে আপনার কোডিং ভাষা প্রয়োগ এবং অনুশীলন করতে প্রচুর সাহায্য করবে। এই প্ল্যাটফর্মের আরেকটি সুবিধা হল এখানের ডেটাগুলো তুলনামূলকভাবে সুগঠিত এবং ক্লিন। যে কারণে এটি ডেটা সাইন্টিস্টদের জন্য ডেটা সায়েন্স প্রোজেক্ট শুরু করার একটি অসাধারণ জায়গা।
এছাড়াও, Kaggle-এ রেজিস্টার করার পর আপনি বিভিন্ন ধরনের ডেটা সায়েন্স বিষয়ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। যেহেতু এটি একটি বিশাল বড় প্ল্যাটফর্ম, একজন নতুন ডেটা সাইন্টিস্ট হলে আপনার জন্য প্রতিযোগিতাগুলোতে বিজয় অর্জন বেশ কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু এই প্রতিযোগিতায় যোগদান করার মাধ্যমে আপনি আপনার ডেটা সায়েন্স বিষয়ক দক্ষতা আরো বৃদ্ধি করতে পারবেন এবং নতুন নতুন টেকনিক্যাল বিষয় সম্পর্কেও জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। এই প্রতিযোগিতার উপর ভিত্তি করে Kaggle একটি র্যাংকিং সিস্টেম তৈরি করে থাকে, যা আপনাকে আপনার ডেটা সায়েন্স বিষয়ক চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকবে।
৩। গিটহাব (GitHub)
গিটহাব একটি ওয়েবসাইট এবং ক্লাউড সার্ভিস যা ডেটা সাইন্টিস্টদের তাদের প্রোজেক্ট সঞ্চয় করতে, পরিচালনা করতে এবং পরিবর্তন ট্র্যাক করতে সহায়তা করে থাকে। গিটহাব কিভাবে কাজ করে তা বুঝতে হলে আপনাকে দুটি বিষয় সম্পর্কে আগে জেনে নিতে হবে। তা হলো - ভার্শন কন্ট্রোল এবং গিট। যা আপনাকে সময়ের সাথে সাথে আপনার প্রোজেক্টের পরিবর্তনগুলোকে ট্র্যাক করতে সাহায্য করে। প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহারকারীদের ওপেন সোর্স প্রজেক্ট, ফর্ক ও কোড শেয়ার এবং প্রোজেক্টের সমস্যাগুলো ট্র্যাক করার সুবিধা দিয়ে থাকে। গিটহাবে আপনি বিনামূল্যেই আপনার অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন এবং আপনার পোর্টফোলিও শেয়ার করতে পারবেন। শুধু এই পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করুন:
১। GitHub এর ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার একটি অ্যাকাউন্ট খুলুন।
২। গিট এবং গিটহাব কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে জেনে নিন।
৩। আপনার পোর্টফোলিও-এর ওয়েবসাইটটি Github Pages এ আপলোড করুন নিম্ন পদ্ধতি অনুসরণ করেঃ
GitHub খুলুন এবং একটি নতুন পাবলিক রিপোজিটরি username.github.io নামে তৈরি করুন, যেখানে ব্যবহারকারীর নামের কথা বলা থাকবে, সেখানে আপনার নাম (বা প্রতিষ্ঠানের নাম) দিন।
- আপনি যদি গিট কমান্ডগুলোর সাথে আগে থেকে পরিচিত না হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি খুব সহজেই কাজগুলো করার জন্য GitHub Desktop ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন।
- আপনার ইন্সটলেশন শেষ হওয়ার পর, Github.com এ যান এবং পেজটি রিফ্রেশ করুন। এরপর “Set up in Desktop” বাটনটিতে ক্লিক করুন। যখন Github desktop অ্যাপটি ওপেন হবে, তখন আপনি আপনার প্রজেক্টটি সেভ করতে পারবেন।
- এরপর আপনি আপনার Text editor-টি খুলুন এবং index.html নামে একটি প্রোজেক্ট তৈরি করুন।
- আপনার প্রয়োজনীয় কিছু পরিবর্তন করা লাগলে তা সম্পাদন করে, এরপর আপনি আপনার প্রোজেক্টটি সকলের নিকট পাবলিশ করতে পারবেন।
৪। আপনার ওয়েব সাইটটিতে একটি থিম (Theme) যোগ করুন।
আপনার প্রোজেক্টগুলো সকলের নিকট শেয়ার করতে গিটহাব খুবই কার্যকর একটি মাধ্যম। এছাড়াও, আপনার গিটহাব অ্যাকাউন্ট এ আপনার প্রোজেক্টগুলো শেয়ার করার পাশাপাশি, প্রত্যেকটি প্রজেক্ট এর সাথে একটি readme.md ফাইল যোগ করে দিতে হবে। যা অন্যান্যদের আপনার প্রোজেক্টটির বিষয়ে সাহায্য করবে।
৪। নিজস্ব ওয়েবসাইট
আপনার যদি নিজস্ব কোনো ওয়েবসাইট বা ব্লগ থাকে, তাও হয়ে উঠতে পারে আপনার পোর্টফোলিও প্রকাশের একটি সেরা মাধ্যম। বিশেষ করে যেহেতু বর্তমানে এ ধরনের ওয়েবসাইট আপনি বিশাল বাজেট খরচ না করে, খুব সহজেই তৈরি করতে পারছেন। আপনার যদি এ ধরনের ওয়েবসাইট তৈরির ইচ্ছা থাকে, তাহলে আপনি WordPress এর সাহায্য নিতে পারেন। এছাড়াও, অন্যান্য CMS যেমন - Strikingly অথবা Wix এর মাধ্যমেও আপনি আপনার ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন। অন্যান্য বড় বড় ওয়েবসাইটগুলো থাকার কারণে, নিজস্ব ওয়েবসাইটের প্রতি সকলকে আকর্ষণ করা একটু কঠিন মনে হলেও, নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকার সুবিধা হলো, এধরনের ওয়েবসাইট আপনি নিজ ইচ্ছা মত নিয়ন্ত্রণ এবং কাস্টোমাইজেশন করতে পারবেন।
৫। মিডিয়াম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
আপনার প্রোজেক্টটি নিয়ে আপনি যত বেশি আলোচনা করবেন, আপনার প্রোজেক্টটি তত বেশি উন্নত করা সম্ভব হবে। নিজস্ব ওয়েবসাইটের বাইরে আপনি মিডিয়াম নামের প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করতে পারেন, যা আপনাকে আপনার প্রোজেক্টটি সকলের নিকট পৌঁছে দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়াও, আপনি Quora, LinkedIn, Twitter, এবং Reddit এর মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সহায়তাও নিতে পারেন।