আর্ট অব প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট: ৮টি গুরুত্বপূর্ণ প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট স্কিল

প্রোডাক্ট টিমকে এক কথায় কোনো ব্যবসার হৃদস্পন্দন বলা যেতে পারে, তা সে যে ধরনের ব্যবসাই হোক। আর সেখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা যিনি পালন করেন, তিনি হচ্ছেন প্রোডাক্ট ম্যানেজার। একজন প্রোডাক্ট ম্যানেজারকে একটি প্রোডাক্টের জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত সব ধরনের কাজই দেখাশোনা করতে হয়। প্রোডাক্টের আইডিয়া তৈরি, ডেভেলপমেন্ট, কাজের গতি বজায় রাখা, ব্যবসার সাথে মানানসই পার্ফেক্ট স্ট্রাটেজি বেছে নেয়া  ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া তাঁর নিত্যদিনের রুটিন।

আর সেজন্য একজন প্রোডাক্ট ম্যানেজারের প্রয়োজন হয় কিছু প্রযুক্তিগত, কৌশলগত এবং ব্যক্তিগত স্কিলের কম্বিনেশন, যেগুলিকে আমরা বলব প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট স্কিল। আজকে আমরা সেইসকল গুরুত্বপূর্ণ প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট স্কিল নিয়েই কথা বলব। আপনি যদি একজন প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসাবে নতুন জয়েন করতে যান কিংবা নিজের প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট স্কিলকে আরো ভাল করে তুলতে চান, তাহলে এই স্কিলসেটগুলি আপনার লাগবেই!


১। টেকনিক্যাল বিষয়ে ভাল ধারণা থাকা

প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট করতে গেলে আপনাকে অবশ্যই ওয়েব ডেভেলপার ও অন্যান্য টেকনিক্যাল টিমের সাথে কাজ করতে হবে, যাতে আপনি এটা নিশ্চিত করতে পারেন যেন প্রোডাক্টটি সকল requirement পূরণ করে। সেকারণে এই সকল প্রসেস সম্পর্কে ভাল জ্ঞান থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। একজন প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে আপনাকে প্রোগ্রামিং বা কোডিং জানতে হবে না। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং টিমের সাথে তাদের ভাষাতেই কথা বললে তাদের সাথে কমিউনেকশনটা অনেক বেশি সহজ হয়ে যায়।

২। User Experience বা UX এর নিয়মকানুন সম্পর্কে জানা

আপনি যখনি মার্কেটে একটি প্রোডাক্ট আনতে চাইবেন, আপনাকে সেই প্রোডাক্টের গ্রাহককে নিয়ে ভাবতে হবে। পণ্যটি যারা ব্যবহার করবে তাদের প্রয়োজন, অভ্যাস, ইচ্ছা, অসুবিধা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে কারণ আপনার প্রোডাক্টটি যেন তাদের সেইসকল প্রয়োজন মিটাতে পারে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে User Experience সম্পর্কে জানা থাকলে একজন প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে আপনি UI & UX টিমের সাথে দারুণভাবে কোলাবোরেট করতে পারবেন।

৩। ব্যবসায়িক ধারণা ও মার্কেট রিসার্চ

প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য এই দুটি অত্যন্তু গুরুত্বপূর্ণ স্কিল। কেননা, আপনি যখনি একটি প্রোডাক্ট ডেভেলপ করা নিয়ে কাজ করবেন, সেই প্রোডাক্টটি আপনার বিজনেস গোলের সাথে যাচ্ছে কি না সেটা মাথায় রাখতে হবে। সেকারণে ব্যবসায়িক কাজকর্ম সম্পর্কে ব্যাসিক বিষয় যেমন বাজেটিং, ক্যাশ-ফ্লো, প্রফিট মার্জিন, ROI, টেক ট্রেন্ডস, কম্পিটিটর এনালাইসিস, Key Performance Indicators (KPIs) ইত্যাদি নিয়ে ধারণা থাকতে হবে।

এছাড়া যখন নতুন প্রোডাক্টের আইডিয়া দাঁড় করাবেন, তখন সেই প্রোডাক্টের জন্য মার্কেটে কেমন ক্রেতা আছে কিংবা কীভাবে প্রোডাক্টটি তৈরি করলে তা মার্কেটের চাহিদা পূরণ করতে পারবে সেসব বিষয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে হবে। আর তার জন্য মার্কেট রিসার্চ কীভাবে করতে হয় তা জানা আবশ্যক।

৪। Technical Specification লিখতে পারা

নতুন প্রোডাক্ট আইডিয়া নিয়ে কাজ করার সময় এর কী কী রিকোয়ারমেন্ট আছে, অর্থাৎ এর কী কী ফিচার থাকতে হবে, এর উদ্দেশ্য কী, প্রোডাক্ট টিম কীভাবে এটি বাস্তবায়ন করবে সেগুলি নিয়ে পরিষ্কার নির্দেশনা তৈরি করতে হয়। একে প্রোডাক্ট রিকোয়ারমেন্ট ডকুমেন্ট বলে। এটি অনুসরণ করেই প্রোডাক্ট ডিজাইনার এবং ইঞ্জিনিয়াররা তাদের কাজের ধারা ঠিক করে নিবে। প্রোডাক্ট রিকোয়ারমেন্ট তৈরি কাজটা সাধারণত প্রোডাক্ট ম্যানেজারই করে থাকেন এবং সে কারণে প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য কীভাবে প্রোডাক্ট রিকোয়ারমেন্ট ও এর টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন লিখতে হয় তা জানা গুরুত্বপূর্ণ।

৫। ক্রিটিক্যাল থিংকিং এবং এনালিটিক্যাল স্কিল

আপনি যখনি প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট-এর কাজ করবেন, আপনাকে প্রতিনিয়ত প্রোডাক্ট সম্পর্কে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, স্ট্রাটেজি ঠিক করতে হবে এবং গ্রাহক ও ব্যবসার জন্য কোনটা বেস্ট হবে সেটা খুঁজে বের করতে হবে। এর জন্য আপনাকে প্রায়ই বিভিন্ন তথ্য পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে মার্কেট, গ্রাহকের আচার-আচরণ, প্রোডাক্টের বিভিন্ন ভার্সন কিংবা ফিচার সম্পর্কে বুঝতে হবে এবং টিমকে সে অনুযায়ী নির্দেশনা দিতে হবে। এইসকল কাজের জন্য প্রয়োজন বেশ ভালো ক্রিটিক্যাল থিংকিং ও এনালাইসিস করার ক্ষমতা।

৬। টাইম ম্যানেজমেন্ট এবং প্রায়োরিটি মেইনটেইন করা

প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্টে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো এটা নিশ্চিত করা যেন টিমের প্রত্যেকে সঠিক সময়ে সঠিক জিনিস নিয়েই কাজ করে এবং প্রত্যেকটি গোল ও ডেডলাইন যেন মেইনটেইন করা হয়। সেজন্য আপনাকে প্রতিনিয়ত আপনার আপনার সময়কে ভাগ করে আলাদা আলাদা প্রজেক্টে দিতে হবে। এছাড়া প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে প্রায়ই চারদিক থেকে বিভিন্ন আইডিয়া, অনুরোধ, পরামর্শ ইত্যাদির মুখোমুখি হবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন কাজটিকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।

৭। কমিউনিকেশন স্কিল

একটি প্রোডাক্ট তৈরি করা থেকে launch করা পর্যন্ত নিয়ে যেতে হলে আপনাকে সব ডিপার্টমেন্টের এক্সপার্টদের সাথে কাজ করতে হবে। মার্কেটিং, সেলস, ডিজাইনার, ডেভেলপার, কাস্টমার সার্ভিস ইত্যাদি সেকশনের সামগ্রিক কাজের ফলাফল হিসেবেই একটি পার্ফেক্ট প্রোডাক্ট তৈরি হয়। তাই প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে আপনাকে অবশ্যই লিখিত এবং মৌখিক কমিউনিকেশনে দক্ষ হতে হবে যেন কমিউনিকেশন গ্যাপের সমস্যায় কোনো প্রজেক্টের কাজ বাধাগ্রস্ত হয়।

৮। AI টুলস ব্যবহার করতে পারা

AI বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে এখন এমন অনেক কাজই নিমেষেই করে ফেলা সম্ভব হয় যা আগে ছিল অনেক সময়-সাপেক্ষ ও ক্লান্তিকর। জেনারেটিভ AI আর LLM বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্টের কাজেও। তাই এসকল AI টুলসের সঠিক ব্যবহার জানা যেমন বাঁচিয়ে দিতে পারে আপনার অনেক সময়, তেমনি আপনাকে এগিয়ে দিতে পারে অনেক দূর।

প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট করা একটি গেইম। সেখানে আপনাকে অনেক চ্যালেঞ্জ ফেইস করতে হবে। এখানে উল্লেখ করা ৮টি স্কিল আপনাকে এই গেইমে অনেক বাড়তি সুবিধা দিবে। নতুন প্রজেক্ট আইডিয়া থেকে ধরে টিমের সাথে তা নিয়ে কমিউনিকেট করা, সকল কাজেই স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিতে পারে এই স্কিলসেট। সফলভাবে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট করতে এইগুলিই আপনার সঠিক টুলস।