কালার থিওরির বেসিক

আপনার ডিজাইনকে করে তুলুন আরো আকর্ষণীয়

-----লার্ন ডিজাইন//

“রঙের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য হলো যে কেউ সহজেই এর ব্যবহার শিখতে পারে, কিছু সাধারণ মূলনীতি এবং চর্চার মাধ্যমেই যা আয়ত্ত্বে আনা সম্ভব। যেকোনো ডিজাইনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ পার্ট কালার থিওরি, আসুন তার মৌলিক কিছু নিয়ম জেনে নেই।


কালার থিওরি কী? (What is color theory?)


কালার থিওরি হলো যেভাবে মানুষ রং দেখে এবং উপলব্ধি করে সেই অনুযায়ী রং মেশানোর ব্যবহারিক বিজ্ঞান। আধুনিক কালার থিওরির মূল বিষয় হলো কালার হুইল (Color Wheel) এবং কিভাবে এর মাধ্যমে প্রাইমারি, সেকেন্ডারি এবং টারশিয়ারি কালারের সংজ্ঞা দেওয়া যায়।

ভৌত জগতের সকল বস্তু আলো প্রতিফলিত করে যার প্রতিটির ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্য রয়েছে। আমাদের ব্রেইন এই ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সংমিশ্রণ উপলব্ধি করে এবং ভিন্ন ভিন্ন রং হিসেবে তা ব্যাখ্যা করে। এই প্রক্রিয়াটি অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে হয় যা আমরা বুঝতে পারিনা।

তাহলে কেনো ডিজাইনারদের কালার থিওরি জানার প্রয়োজন? কারণ ডিজাইনারদের রঙের গুরুত্ব বুঝতে হবে। রং আমাদের চিন্তার জগতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে, হোক সেটা সামান্য ওয়েব পেজ বা বইয়ের কভারের। Institute for Color Research এর একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, মানুষ কোনো বস্তু, ব্যক্তি বা পরিবেশ দেখার ৯০ সেকেন্ডর মাঝেই অবচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়। আর সেই সিদ্ধান্তের ৬২% থেকে ৯০% রঙের ওপর ভিত্তি করে। তাই সঠিক রং নির্বাচনের ওপর আমাদের‌ গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ।

কালার হুইল কী? (What is the color wheel?)


কালার হুইল হলো এমন একটি সরঞ্জাম যা কয়েক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে মানুষকে রং সাজাতে, শ্রেণিবদ্ধ করতে এবং মিশ্রিত করতে সাহায্য করে আসছে। ১৬৬৬ সালে স্যার আইজ্যাক নিউটন (Isaac Newton) রঙের চাকার প্রথম সংস্করণটি ডিজাইন করেছিলেন যা এখনো ব্যবহৃত হয়।


কালার হুইলের বৈশিষ্ট্যগুলি হলো:


• প্রাইমারি রং (Primary Color): লাল (Red), হলুদ (Yellow) এবং নীল (Blue)।


• সেকেন্ডারি রং (Secondary Color): এরা প্রাইমারি রংগুলোর সংমিশ্রণে তৈরি। সবুজ (Green), কমলা (Orange) এবং বেগুনি (Purple)।


• টারশিয়ারি রং (Tertiary Color): এরা প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি রংগুলোর সংমিশ্রণে তৈরি। লাল-বেগুনি (Red-Purple), লাল-কমলা (Red-Orange), হলুদ-কমলা (Yellow-Orange), হলুদ-সবুজ (Yellow-Green), নীল-সবুজ (Blue-Green), নীল-বেগুনি (Blue-Purple)।

কালার হুইলের উদ্দেশ্য হলো ডিজাইনারদের দ্রুত রঙের প্রকৃতি বুঝতে এবং তাদের কার্যকরভাবে মিশাতে সাহায্য করা।

রঙের তাপমাত্রা কী? (What is color temperature?)


রঙেরও তাপমাত্রা থাকে এবং এর ফলে তারা উষ্ণ বা শীতল রং হয়। কালার হুইল ব্যবহার করে খুব সহজেই তাপমাত্রা বোঝা‌ যায়। কালার হুইলকে y অক্ষ বরাবর লম্বালম্বি ভাগ করলে ডানদিকে সব উষ্ণ রং এবং বামদিকে সব শীতল রং পাওয়া যায়।

উষ্ণ রংগুলো লাল (Red), কমলা (Orange), হলুদ (Yellow) এবং তাদের সকল সংমিশ্রণে তৈরি। উষ্ণ রংগুলো দিনের বিভিন্ন সময়ে সূর্যের রঙকে প্রতিনিধিত্ব করে। ব্যবহারকারীর মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য উষ্ণ রং চমৎকার।

শীতল রং হলো নীল (Blue), সবুজ (Green), বেগুনি (Purple) এবং তাদের বিভিন্ন শেড, তবে নীল (Blue) এদের মধ্যে শীতলতম। কালার হুইলের শীতল অংশে একমাত্র প্রাইমারি রং নীল (Blue) পাওয়া যায়। শীতল রংগুলো পানি, রাত, প্রকৃতি, শান্তি এবং ভারসাম্যের প্রতিনিধিত্ব করে।

রঙের বৈচিত্র্য কী? (What are color variations?)


প্রাইমারি, সেকেন্ডারি এবং টারশিয়ারা রং ছাড়াও আরো কি কি ভাবে রং তৈরি করা যায় তা আমরা এখন আলোচনা করবো। চলুন জেনে নেই Hue, Shade, Tint এবং Tone সম্পর্কে।  সাথে কিভাবে এগুলো ব্যবহার করে সীমাহীন সংখ্যক রং তৈরি করা যায়।


• Hue হলো বিশুদ্ধ রং, কালার হুইলে কোনকিছু অ্যাড করা ছাড়াই আমরা এটি দেখতে পাই।

• Tint হলো Hue এর সাথে সাদা (White) যোগ করলে যা পাওয়া যায়। যেমন: লাল (Red) এবং সাদা (White) যোগ করলে গোলাপি (Pink) পাওয়া যায়।

• Shade হলো Hue এর সাথে কালো (Black) যোগ করলে যা পাওয়া যায়। যেমন: লাল (Red) এবং কালো (Black) যোগ করলে মেরুন (Maroon) পাওয়া যায়।

• Tone হলো Hue এর সাথে কালো (Black) এবং সাদা (White) উভয়ই অর্থাৎ ধূসর (Gray) যোগ করার মাধ্যমে যা পাওয়া যায়। Tone পরিবর্তন করার মাধ্যমে মূল রঙের তীব্রতা এবং অন্ধকার ভাব দূর করা যায় সহজেই।


এছাড়া নিচের আরো কিছু বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে আপনি বিভিন্ন বৈচিত্র্যের রং তৈরি করতে পারবেন।
• Chroma হলো রঙের বিশুদ্ধতা। Chroma যত বেশি হবে, রংট ততো বিশুদ্ধ হবে।


• Saturation হলো রঙের সামগ্রিক তীব্রতা। এটা যত বেশি হবে, রং ততো তীব্র অর্থাৎ শক্তিশালী হবে।


• Value দ্বারা রঙটি কতোটা অন্ধকারাচ্ছন্ন বা আলোকিত তা বোঝায়। ভ্যালু যত বেশি হবে, রং ততো আলোকিতো বা হালকা হবে।

কালার মডেল কী? (What are color models?)



কোনো ডিজাইন প্রজেক্টে রংগুলো কার্যকরভাবে প্রয়োগ করার জন্য ডিজাইনারদের দুটি মৌলিক কালার মডেল সম্পর্কে জানতে হবে। ভৌত বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে রঙগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, Additive এবং Subtractive.

Additive কালার মডেল যা RGB কালার মডেল নামেও পরিচিত, বিভিন্ন স্ক্রিনে ব্যবহৃত রঙের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এই মডেল লাল (Red), নীল (Blue) এবং সবুজকে (Green) প্রাথমিক রং হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে। এই প্রাথমিক রংগুলোর সংমিশ্রণগুলো সায়ান (Cyan), ম্যাজেন্টা (Magenta) এবং হলুদ (Yellow) রং দেয়। রংগুলোর উজ্জ্বলতা আলোর মাত্রা যোগ করার সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

Subtractive কালার মডেল আলো বিয়োগ করার মাধ্যমে রং পায় এবং দুটি কালার সিস্টেম RYB এবং CMY দ্বারা উপস্থাপিত হয়। লাল (Red), হলুদ (Yellow) এবং নীল (Blue) শৈল্পিক রং হিসেবে পরিচিত এবং চিত্রকলায় জনপ্রিয়। CMY কালার সিস্টেম একত্রিত করার জন্য সবচেয়ে কার্যকর রং হিসেবে বিবেচনা করে সায়ান (Cyan), ম্যাজেন্টা (Magenta) এবং হলুদ (Yellow) কে।

কালার স্কিম কী? (What are color schemes?)


এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে আপনার ডিজাইনের জন্য কালার হুইলকে সঠিকভাবে ব্যবহার করবেন।
কালার থিওরি অনুযায়ী বিভিন্ন রঙের কিছু harmonic combination তৈরি করার উপায় হলো:


• কালার হুইলে সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে অবস্থিত দুটি রং নেওয়া।


• ত্রিভুজের তিন কোন বরাবর কালার হুইলে যেই তিনটি রং পাওয়া যায় তাদের একসাথে নেওয়া।


• চতুর্ভুজের চার কোন বরাবর কালার হুইলে যেই চারটি রং পাওয়া যায় তাদের একসাথে নেওয়া।


উপরে উল্লেখিত যেকোনো কালার combination নিয়েই আপনি দারুণ harmonic ডিজাইন তৈরি করতে পারবেন।

Monochromatic কালার স্কিম একটি রংকে বিভিন্ন shade এবং tone এ উপস্থাপন করে।

Analogous কালার স্কিম এমন কিছু রং উপস্থাপন করে যারা কালার হুইলে একসাথে থাকে। এই টাইপের কালার স্কিম খুব বেশি বৈসাদৃশ্য তৈরি করেনা এবং বিভিন্ন ওয়েবপেজ, ব্যানার এবং পপআপগুলিতে ভালো দেখায়।

Complementary কালার স্কিম এমন সব রং ব্যবহার করে যারা কালার হুইলে একে অপরের বিপরীতে অবস্থান করে। এই ধরনের স্কিম আকর্ষণীয় এবং সুস্পষ্ট contrast তৈরির জন্য উপযোগী।

Split-Complementary কালার স্কিম Complementary কালার স্কিমকে আরো প্রসারিত করে। এটি কালার হুইল থেকে যেকোনো একটি রং এবং ঐ রং এর ঠিক বিপরীতে অবস্থিত রংটির দুই পাশের রং ব্যবহার করে, এভাবে একটি ত্রিভুজ তৈরি করে। এটি contrast লেভেল কমিয়ে দেয় কিন্তু আরো বেশি রং ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়।

Triadic কালার স্কিম কালার হুইলে সমান দূরত্বের তিনটি রং ব্যবহার করে। এই স্কিম ব্যবহার করে সাদৃশ্য বজায় রাখার একটি উপায় হলো, একটি রং বেশি ব্যবহার করা এবং বাকি দুইটি সূক্ষ্ম নকশার জন্য ব্যবহার করা।

Tetradic কালার স্কিম আরো জটিল পদ্ধতি ব্যবহার করে। এই স্কিম কালার হুইলে একে অপরের বিপরীতে অবস্থিত ৪ টি রং ব্যবহার করে। রংগুলো সংযুক্ত করলে আয়তক্ষেত্র পাওয়া যাবে।

সবশেষে বলা যায়, এটা সত্যি যে কালার থিওরির মতো জটিল বিষয় একটিমাত্র আর্টিকেল দ্বারা পরিপূর্ণভাবে বোঝা সম্ভব নয়। তবে উপরে উল্লেখিত মৌলিক বিষয়গুলো আপনাকে ডিজাইন প্রজেক্টে কাজ করার সময় রং সম্পর্কে আরো গভীর ধারণা দিবে। এছাড়াও এই মৌলিক বিষয়গুলো আপনাকে বিভিন্ন বিখ্যাত ডিজাইন আরো ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।

কি? কালার থিওরি সম্পর্কে জানলেন তো? Now Just Practice!

এখনই শুরু করে দিন আপনার UI/UX ডিজাইন জার্নিটা। ভালো ডিজাইন ফাউন্ডেশন, ডিজাইন সেন্স, কোনো একটি স্পেসিফিক নিশ- এ দক্ষ হবার এখনই তো সময়।

হ্যাপি ডিজাইনিং…