প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট বনাম প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট

প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট এবং প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্টের মধ্যে পার্থক্য আছে কী?

প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট এবং প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্টের দুইটি একদম ভিন্ন কনসেপ্ট যা আমদের অনেকেরই রয়েছে অজানা। প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট এবং প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্টের মধ্যে কী কী পার্থক্য রয়েছে তা সম্পর্কে জানতে পারবেন আজকের এই ফিচারে।

প্রোডাক্ট এবং প্রোজেক্টের মধ্যে ভিন্নতা কী?

প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট এবং প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্টের মধ্যে ভিন্নতা জেনে নেওয়ার আগে প্রোডাক্ট এবং প্রোজেক্টের মধ্যে ভিন্নতা জানতে হবে।

প্রোডাক্ট হচ্ছে পরিষেবা বা সিস্টেম যা গ্রাহকের তার চাহিদার সমান ভ্যালু প্রদান করে। কয়েকটি ধাপ পার করে একটি পণ্য তৈরি করতে হয়। প্রথমে একটি আইডিয়া তৈরি করা হয়, এরপর সেই আইডিয়া ডেভেলপ করে পরবর্তীতে মার্কেটে পণ্যটি অ্যাডভারটাইজিংয়ের মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করে। এই কাজগুলোর সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে একটি কোম্পানির প্রোডাক্ট টিম কাজ করে থাকে।

অন্যদিকে, প্রোজেক্ট হল একটি পণ্য অথবা পরিষেবা তৈরি করার একটি অস্থায়ী প্ল্যান। এটি নির্দিষ্ট তারিখে শুরু হয় এবং শেষ হয়। নির্দিষ্ট বাজেট এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উদ্দেশ্যগুলো অর্জন করতে পারে তবে একটি প্রোজেক্ট সফল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একটি প্রোজেক্টের কাজ হচ্ছে- নতুন পণ্য তৈরি , মার্কেটে ইতোমধ্যে আছে এরকম পণ্যের সমস্যাগুলো সমাধান করে ইম্প্রুভ করা কিংবা নতুন কোনো বিজনেস প্রসেস সেট আপ করা। একবার প্রোজেক্টের লক্ষ্যগুলো অর্জিত হলে, প্রোজেক্ট শেষ হয়।

প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট এবং প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্টের মধ্যে ভিন্নতা

প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট এবং প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্টের মধ্যে বেশ কিছু ভিন্নতা রয়েছে। প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্টে কোন ডেডলাইন নেই। ফলে প্রোডাক্ট ম্যানেজেমেন্ট সাময়িক কার্যক্রম নয় বরং একটি একটি চলমান প্রক্রিয়া যা সময়ের সাথে সাথে একটি প্রোডাক্টে নিত্যনতুন ফিচার অ্যাড করে এবং গ্রাহকের পরিবর্তনশীল চাহিদা পূরণ করে, কিন্তু প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্টে একটি ডেডলাইন মেনে সকল কাজ ঐ ডেডলাইনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হয়।

প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির এমন একটি ফাংশন যা কোম্পানির অধীনে থেকে একটি প্রোডাক্ট কিংবা প্রোডাক্টের সকল লাইফসাইকেলের সাথে সম্পর্কিত সকল প্ল্যানিং, ফোরকাস্টিং, উৎপাদন এবং মার্কেটিং প্রসেস নিয়ে কাজ করে।
এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা একটি নির্দিষ্ট প্রকল্পের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে এবং জ্ঞান, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করা হয়।
প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্টের ৬ টি ধাপ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে-

  • উদ্ভাবন- এটি প্রথম ধাপ। এই ধাপে প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস নিয়ে কয়েকটি আইডিয়া তৈরি করা হয়। যে আইডিয়াটি আপাত দৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি লাভজনক মনে হয় সেটি বেছে নেওয়া হয়।
  • অ্যানালাইসিস- এই ধাপে যে আইডিয়াটি নির্বাচন করা হয়েছে তা অ্যানালাইসিস করা হয়।
  • ডেভেলপমেন্ট- এই ধাপে পণ্যের ডিজাইন করা এবং পণ্যটি তৈরি করে তা পরীক্ষা করে দেখা হয়।
  • গো-টু-মার্কেট- এই ধাপে পণ্যটি চূড়ান্তভাবে বাজারে রিলিজ করা হয়।
  • ইন-লাইফ- এই ধাপে পণ্যটি গ্রাহকদের চাহিদা পুরোপুরি মেটাতে পারছে কিনা তা যাচাই বাছাই করা হয়। যেকোনো সমস্যা থাকলে তা সমধান করা হয়।
  • এন্ড অফ লাইফ- এই ধাপে পণ্যের চাহিদা শেষ হয়ে যায়। পণ্যটিকে বাজার থেকে উঠিয়ে আনতে হয়।

প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্টের ৫ টি ধাপ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে-

  • সুচনা- প্রোজেক্টটি বাস্তবধর্মী এবং বিজনেসে ভ্যালু ক্রিয়েট করবে কিনা তা মূল্যায়ন করা।
  • প্ল্যানিং- এই ধাপে একটি বিশদ প্রকল্প পরিকল্পনা তৈরি করা হয়।
  • এক্সিকিউশন- প্রোজেক্ট প্ল্যানে উল্লেখ থাকা কাজগুলো সম্পন্ন করা।
  • মনিটরিং এবং কন্ট্রোলিং- এই ধাপটি এক্সিকিউশ্ন ধাপের সাথেই ঘটে। সকল কাজ পর্যবেক্ষণ করা হয় এই ধাপে, কোনো পরিবর্তন আনতে হলে এই ধাপে আনা হয়।
  • ক্লোজার- প্রোজেক্টের সব কার্যক্রম চূড়ান্ত করা এবং প্রোডাক্ট তার গ্রাহককে হস্তান্তর করা হয়। এছাড়াও প্রোজেক্ট পরবর্তী মূল্যায়নও এই ধাপে করা হয়।

প্রোডাক্ট ম্যানেজারের কাজ

প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের প্রোডাক্ট ম্যানেজার বলা হয়। এঁরা বেশিরভাগ সময় নিম্নে বর্ণিত কয়েকটি কাজে ব্যয় করে:

১. কোম্পানির মার্কেট, ইউজারদের ব্যক্তিত্ব এবং কম্পিটিটর সম্পর্কে জানার জন্য গবেষণা করা।

২. ইন্ড্রাস্ট্রি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার পর সেই সংগ্রহিত তথ্যগুলোকে কাজে লাগিয়ে একটি রোডম্যাপ তৈরি করা। যার মধ্যে রয়েছে লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা , প্রোডাক্টের একটি বিস্তৃত-স্ট্রোক ওভারভিউ এবং সম্ভাব্য একটি টাইমলাইন তৈরি করা যে টাইমলাইনের মধ্যে প্রোডাক্টের ডেভেলপমেণ্ট থেকে শুরু হতে বাজারজাতকরণ করা সম্ভব হবে।

৩. রোডম্যাপটি ব্যবহার করে একটি কার্যকরী স্ট্রাটেজিক প্ল্যানিং তৈরি করা এবং তা প্রতিষ্ঠানের মূল স্টেকহোল্ডারদের কাছে উপস্থাপন করা। যেমনঃ সিইও, ইনভেস্টর এবং প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট টিম ইত্যাদি। এছাড়াও প্রোডাক্টটি তৈরি করার সময় এবং তার বাইরেও ক্রস-ফাংশনাল টিমের মধ্যে চলমান যোগাযোগ রাখা।

৪. যদি রোডম্যাপটি পরিকল্পনা চলাকালীন অনুমতি পেয়ে থাকে, তবে প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্টের জন্য কোম্পানির অন্যান্য টিমের সাথে সমন্বয় করে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করা।

৫. প্রোডাক্টটি তৈরি, টেস্টিং এবং বাজারে আনার পর, ব্যবহারকারীদের থেকে সরাসরি প্রতিক্রিয়া নিয়ে সে তথ্য বিশ্লেষণ করা। প্রোডাক্টের কোন বিষয়গুলো ভালো এবং কোন বিষয়গুলো ভালো নয় তা সম্পর্কে একটি ধারণা নেওয়া এবং ভবিষ্যতে এই প্রতিক্রিয়াগুলি কাজে লাগিয়ে প্রোডাক্টের ইম্প্রুভমেন্টের জন্য জন্য প্রয়োজনীয় টিমের সাথে কাজ করা।

প্রোজেক্ট ম্যানেজারের কাজ

একজন প্রোজেক্ট ম্যানেজার একটি প্রোজেক্টের সব স্টেজ নিয়ে কাজ করে এবং প্রোজেক্ট যাতে সফলভাবে শেষ করা যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখে। একজন প্রোজেক্ট ম্যানেজার বেশিরভাগ সময় নিম্নে বর্ণিত কাজে ব্যয় করে:

১. প্রতিটি কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্যারামিটার সেট করা এবং যেসকল লজিস্টিক ম্যাটেরিয়াল দরকার তা ম্যানেজ করা।

২. প্রোজেক্টের সকল কার্যক্রম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনিটর করা এবং সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো খুঁজে বের করা,এছাড়াও কোনো সমস্যা সংঘটিত হলে তা সাথে সাথে সমাধান করা।

৩. প্রোজেক্টের বাজেট যাতে ক্রস না করে সেদিকে খেয়াল রাখা।

৪. প্রোজেক্টের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে সবসময় যোগাযোগ রাখা।

একটি প্রোডাক্ট শুধুমাত্র একটি প্রোজেক্টের মাধ্যমে তৈরি হয়। এমনকি একটি প্রোডাক্ট তৈরির সময় একের অধিক প্রোজেক্ট সংঘটিত হতে পারে। প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট এবং প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্টের মধ্যকার পার্থক্য আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

References:

  1. https://www.productplan.com/learn/product-management-versus-project-management
  2. https://nulab.com/learn/design-and-ux/product-management-vs-project-management/
  3. https://www.koombea.com/blog/product-manager-vs-project-manager/
  4. https://www.forbes.com/advisor/education/project-manager-vs-product-manager/