এসব আইকন এবং সিম্বলের ইতিহাস কিন্তু বেশ মজার !
-----লার্ন ডিজাইন//
“আমাদের আশেপাশে সব জায়গায় বিভিন্ন সিম্বল ও আইকন ব্যবহার করা হয়। সবচেয়ে
বেশি ব্যবহৃত হয় ডিজিটাল প্রযুক্তিতে, যেমন: UI ডিজাইনে। কখনো কখনো সিম্বলগুলো abstract এবং অস্পষ্ট হয়। তবে সঠিকভাবে ব্যবহার করলে সামান্য একটি সিম্বল বা আইকনের মাধ্যমে অনেক তথ্য জানানো সম্ভব।
এইযে আপনি আর্টিকেলটি পড়ছেন, পড়ার জন্য এমন অনেক আইকন ব্যবহার করেছেন যা হয়তো আপনার মনেও নেই। কখনো কি ভেবে দেখেছেন কে এগুলো ডিজাইন করলো? কেন এগুলো এতো জনপ্রিয় বা এই সাধারণ আইকনগুলোর পিছনে কোনো অসাধারণ ইতিহাস আছে কী? চলুন আমরা তা জেনে নেই।
১. ফ্লপি ডিস্ক সেভ আইকন (Floppy Disk Save Icon)
একুশ শতকের শুরুর দিকে Skeuomorphic ডিজাইন খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কোনো আইটেমের আইকনকে তার বাস্তব আকৃতির সাথে মিল রেখে ডিজাইন করাই হলো Skeumorphism. এভাবে ডিজাইন করার ফলে ব্যবহারকারীরা সহজেই বুঝতে পারে আইকনটির অর্থ কি। যেমন ফ্লপি ডিস্কের আইকনটি দেখে যে কেউ সহজেই বুঝতে পারতো এটা সেভ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। যদিও ফ্লপি ডিস্ক এখন আর ব্যবহার করা হয়না, কিন্তু যুগের পরিবর্তনে হারিয়ে যায়নি আইকনটির অর্থ এবং জনপ্রিয়তা।
২. ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমের কমান্ড কি (The Command Key on macOS)
১৯৮৩ সালের আগস্ট মাসে Apple Macintosh এর ডেভেলপমেন্ট টিম তাদের ল্যাপটপে একটি স্পেশাল কমান্ড key যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই key এর উদ্দেশ্য ছিলো menu কমান্ডের জন্য অন্যান্য key গুলোর সমন্বয়ে কাজ করা। অ্যাপলের গ্রাফিক ডিজাইনার সুজেন ক্যারে (Susan Kare) বিভিন্ন বইয়ে পছন্দমতো আইকন খুঁজছিলেন। হঠাৎ একটি সুইডিস সিম্বল তার নজর কাড়ে যা সেখানে পথনির্দেশক হিসেবে বেশ জনপ্রিয়, যা কোনো 'আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য' দেখানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এভাবেই নান্দনিক এই সিম্বলটি ম্যাকবুকে স্থান করে নেয়।
৩. ব্লুটুথ সিম্বল (The Bluetooth Symbol)
এটা রূপকথার মতো শোনাতে পারে, কিন্তু ব্লুটুথ শব্দটি এসেছে ১০ শতকের ডেনমার্কের একজন রাজার নাম থেকে। কথিত আছে, ব্লুবেরি ফল পছন্দ করায় রাজার দাঁত সবসময় নীল থাকতো, যেই কারণে তিনি হ্যারাল্ড ব্লুটুথ (Harald Bluetooth) নামে জনপ্রিয় ছিলেন সকলের মাঝে। কিংবদন্তি রয়েছে যে হ্যারল্ড ব্লুটুথ ডেনমার্ক এবং নরওয়েকে এক করেছিলেন। ব্লুটুথ প্রযুক্তির নির্মাতারা আশা করেছিলেন যে এই আবিষ্কার সকল ডিভাইসকে একত্রিত করবেন। ব্লুটুথ আইকনটি তৈরি করা হয়েছে H এবং B অক্ষরের নরডিক ভার্সন একত্রিত করে, যেখানে H এবং B হলো হ্যারল্ড ব্লুটুথ এর নামের প্রথম অক্ষর।
4. হ্যামবার্গার মেন্যু আইকন (The Hamburger Menu Icon)
অনেক ডিজাইনার মনে করেন এই আইকনটি সঠিক অর্থ প্রকাশ করে না। অন্যদিকে অনেকে মনে করেন এটা অপ্রয়োজনীয় কমান্ড হাইড করে আমাদের জায়গা বাঁচিয়ে দেয়। মজার ব্যাপার হলো, কোনো খাবারের সাথে এই নামের কোনো সম্পর্ক নেই।
১৯৭৭ সালে Xerox তার প্রথম পার্সোনাল কম্পিউটার Star তৈরি করার কাজ শুরু করে। এই কম্পিউটারের ডিজাইন টিম আইকনগুলোকে সুন্দর এবং ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন । কয়েকটি অবশিষ্ট কমান্ড যেগুলোর জন্য জায়গা হচ্ছিলো না, সেগুলো অ্যাড করার সিম্পল উপায় ছিলো এই হ্যামবার্গার আইকন। Xerox এর সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান ভিজ্যুয়াল ডিজাইনার নরম্যান কক্স (Norman Cox) স্বীকার করেছেন যে, কেউই আশা করেননি পুরো সিস্টেমের সবচেয়ে কম পরিকল্পিত অংশটি এতো জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
৫. ইউএসবি পোর্ট আইকন (USB Port Icon)
আপনি সম্ভবত আজকেই এই আইকনটি দেখেছেন, চার্জিং কেবল ব্যবহার করে ফোনে চার্জ দেওয়ার সময়। কে সর্বপ্রথম এই আইকনটি ডিজাইন করেছিলেন তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। একটা জনপ্রিয় থিওরি হলো, এটা রোমান দেবতা নেপচুনের ত্রিশুলের অনুকরণে তৈরি। এই আইকনের ত্রিভুজ, বৃত্ত এবং বর্গক্ষেত্র একাধিক ডিভাইসকে নির্দেশ করে যা একটি USB পোর্ট অ্যালাউ করে।
৬. রিসাইকেল সিম্বল (Recycle Symbol)
১৯৭০ সালে প্রথম উৎযাপিত "আর্থ ডে" সমাজে পরিবেশগত সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করে। সেই সময় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি ছিল প্লাস্টিকের ব্যাগ বা খাবারের প্যাকেটের মতো ভোক্তা বর্জ্যের নিষ্পত্তি। আ্যমেরিকার The Container Corporation রিসাইক্লিং এর একটি সার্বজনীন সিম্বল তৈরির জন্য জাতীয় প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বব্যাপী সকল মানুষকে রিসাইক্লিং করতে এবং আমাদের পৃথিবীকে বাঁচাতে সহায়তা করার জন্য উৎসাহিত করা।
২৩ বছর বয়সী স্থপতি গ্যারি অ্যান্ডারসন (Gary Anderson) তার সিম্পল ডিজাইন দিয়ে জিতে নেন সেই পুরষ্কার। রিসাইক্লিং সিম্বলের ডিজাইনে তীরযুক্ত রেখাগুলি একটি অসীম লুপকে বোঝায়, যা রিসাইক্লিং করার মূলনীতিগুলোকে সংজ্ঞায়িত করে- ব্যবহার হ্রাস করা, পুনরায় ব্যবহার করা, পুনর্ব্যবহার করা।
৭. শান্তির সিম্বল (Peace Symbol)
তিনটি লাইন এবং একটি বৃত্তের সমন্বয়ে গঠিত এই সিম্বলটি সকল সংস্কৃতিতে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ১৯৫৮ সালে লন্ডনের ট্রাফালগার থেকে বার্কশায়ারের অস্ত্র স্থাপনা পর্যন্ত পারমানবিক অস্ত্র বিরোধী মিছিলে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিলো। তখনই একজন গ্রাফিক ডিজাইনার জেরাল্ড হোলটম (Gerald Holtom) নৌ সেমাফোর সংকেত দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এই সিম্বলটি তৈরি করেছিলেন। ৪৫° কোণে থাকা দুটি পতাকা "N" (Nuclear) অক্ষরটিকে নির্দেশ করে, আর উপরে এবং নিচে সোজা হয়ে থাকা পতাকাদুটি "D" (Disarmament) নির্দেশ করে। পরে সিম্বলটি অ্যামেরিকায় স্থানান্তরিত হয় এবং Committee for Nonviolent Action এটিকে তাদের লোগোতে পরিণত করে। এখন আপনি শান্তিবাদ এবং অহিংসার সিম্বল হিসেবে সব জায়গায় এটি দেখতে পাবেন।
৮. অ্যাট সিম্বল (The At @ Symbol)
এই সিম্বলটির উৎস অজানা, কিন্তু ব্যবহারের ইতিহাস বেশ পরিষ্কার। কাতালান, স্প্যানিশ এবং পর্তুগিজ ভাষাভাষীর মানুষ পরিমাপ করতে সিম্বলটি ব্যবহার করতো। এটি "আরোবা (Arroba)” এর সংক্ষিপ্ত রূপ হিসেবে ব্যবহৃত হতো যা ২৫ পাউন্ড ওজনের সমান। সবশেষে এটি টাইপরাইটার কিবোর্ডগুলোতে স্থান করে নেয় At the rate of এর সংক্ষিপ্ত রূপ হিসেবে। তবে এর বর্তমান ব্যবহারের কৃতিত্ব অ্যামেরিকান তড়িৎ প্রকৌশলী রে টমলিনসনের (Ray Tomlinson) । ১৯৭১ সালে তিনি প্রথম ইমেইল তৈরি করেন এবং এই সিম্বলটি ব্যবহার করেন, যার দ্বারা একজন ব্যবহারকারী যেই নির্দিষ্ট কম্পিউটার বা ডোমেনে অবস্থিত তা নির্দেশ করা হয়।
৯. প্লে সিম্বল (The Play Symbol)
যদিও এই সিম্বলটির অর্থ বেশ পরিষ্কার, কিন্তু একসময় এটি সব জায়গায় ব্যবহার করা হতো না। টেপ প্লেয়ারের যুগে বিভিন্ন ব্র্যান্ড বিভিন্ন সিম্বল ব্যবহার করতো। ১৯৬০ এর দশকে এটি উদ্ভুত হয়েছিলো এবং ৭০ এর দশকে ছড়িয়ে পরে। যদিও টেপ রেকর্ডার এখন আর নেই, কিন্তু এই প্লে বাটন সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত আইকনগুলোর একটি হয়ে টিকে আছে।
১০. পজ সিম্বল (The Pause Symbol)
Play সিম্বলটি অনেক সহজবোধ্য হলেও Pause সিম্বলটি অনকটাই abstract। অনেকে ধারণা করেন এই সিম্বলটি লিখিত কবিতা থেকে এসেছে, যেখানে দুটি চরণের মাঝে বিরতি হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়। একই উদ্দেশ্যে গায়কেরা এই সিম্বলটি ব্যবহার করেন। জাপানিজ ভাষায় শব্দের শেষে ঠিক এমন দুটি রেখা ব্যবহার করা হয় যার দ্বারা থামা বোঝায়।
কি? বিখ্যাত সব আইকন ও সিম্বল সম্পর্কে জানলেন তো? Now Just Practice!
এখনই শুরু করে দিন আপনার UI/UX ডিজাইন জার্নিটা। ভালো ডিজাইন ফাউন্ডেশন, ডিজাইন সেন্স, কোনো একটি স্পেসিফিক নিশ- এ দক্ষ হবার এখনই তো সময়।
হ্যাপি ডিজাইনিং…