চলুন দেখে নেই ডিজাইনের ৭ টি উপাদান কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

-----লার্ন ডিজাইন//

“রাশিয়ান চিত্রশিল্পী ওয়াসিলি ক্যান্ডিনস্কি (Wassily Kandinsky) বলতেন, সবকিছুই একটি বিন্দু থেকে শুরু হয়। ডিজিটাল ডিজাইনে, বিন্দু হল ডিজাইনের সবচেয়ে মৌলিক উপাদান। এমনকি সবচেয়ে জটিল এবং সফিস্টিকেটেড ডিজাইনগুলোকে ভাঙ্গলে আমরা ডিজাইনের মৌলিক উপাদানগুলো পাব — লাইন, শেইপ, কালারস্, টেক্সচার, টাইপ, স্পেস এবং মোশন। একজন চিত্রশিল্পী যেমন ক্যানভাসে পেইন্ট এবং ব্রাশ ব্যবহার করেন, ঠিক তেমনি ডিজাইনাররা তাদের ডিজাইন তৈরি করতে ডিজাইনের উপাদান (লাইন, শেইপ, কালারস্, টেক্সচার, টাইপ, স্পেস, মোশন) ব্যবহার করেন।

আপনি ভাবতে পারেন কেন আপনার এই বেসিক বিষয়গুলো জানা দরকার। আপনি UX ডিজাইন শেখার আগে এবং এর নীতিগুলো জানার আগে, আপনার টুলকিটকে জানা এবং প্রতিটি উপাদান কীভাবে আপনার নকশা এবং সামগ্রিক ইউজার এক্সপেরিয়েন্সক প্রভাবিত করতে পারে তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।

এই আর্টিকেলে আমরা ডিজাইনের ৭টি মৌলিক উপাদান ও তাদের ব্যবহার সম্পর্কে জানবো।

ডিজাইনের ৭টি উপাদানগুলো হলো:

১. লাইন (Lines)

২. শেইপ (Shapes)

৩. স্পেস (Space)

৪. কালার (Color)

৫. টেক্সচার (Texture)

৬. টাইপোগ্রাফি (Typography)

৭. মোশন (Motion)

১. লাইন (Lines)

Icon

Description automatically generated

ওয়েভি, স্ট্রেইট এবং জিগজ্যাগ লাইন

লাইন, ডিজাইনের একটি মৌলিক উপাদান যা দুটি সংযুক্ত বিন্দু নিয়ে গঠিত। জ্যামিতিতে, এই উপাদানটিকে একটি লাইন সেগমেন্ট বলে, কিন্তু ডিজাইনে, আমরা এটিকে শুধু লাইন বলি। শুধু লাইন ব্যবহার করা যেতে পারে বা অন্যান্য শেইপ, যেমন: সার্কেল, স্কয়ার বা ট্রায়াঙ্গেলের মতো আকার তৈরি করতে লাইন ব্যবহার করা হয়।

ডিজাইনে, লাইন প্রায়শই ডিভাইডার হিসাবে বা ছবির আউটলাইন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। লাইন ওয়েভি, স্ট্রেইট, জিগজ্যাগ, পুরু বা পাতলা হতে পারে। এমনকি ডিজাইনে, আমরা কখনও কখনও ইম্পেক্টফুল ডিভাইডার হিসাবে ডটেড বা ড্যাশড লাইন ব্যবহার করি।

লাইনের উদ্দেশ্য

ডিজাইন কম্পোজিশন এবং হায়ারার্কি তৈরিতে লাইন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন কনটেন্ট গ্রুপসকে আলাদা করতে আমরা হরাইজন্টাল এবং ভার্টিকাল লাইন ব্যবহার করি। লাইন একটি নির্দিষ্ট তথ্য বা পয়েন্টের দিকে ব্যবহারকারীদের মনোযোগ আকর্ষণে সাহায্য করে।

২. শেইপ (Shapes)

বেসিক জিওমেট্রিক শেইপ: একটি স্কয়ার, সার্কেল, রাইট ট্রায়াঙ্গল, স্টার এবং হেক্সাগন

ডিজাইনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক উপাদান হচ্ছে শেইপ। দুটি ধরনের শেইপ আছে: জিওমেট্রিক এবং অর্গানিক। জিওমেট্রিক শেইপগুলো হলো যেগুলো আপনি গণিত ক্লাসে পড়েছিলেন, যেমন: স্কয়ার এবং সার্কেল। অর্গানিক শেইপগুলো হলো যেগুলো খালিহাতে বা মাউস বা ডিজিটাল পেন ব্যবহার করে আঁকা যায়, যেমন: পাতা বা মেঘ যা প্রকৃতিতে পাওয়া যায়।

আকারের উদ্দেশ্য

ডিজাইনের প্রতিটি উপাদান কোনো না কোনোভাবে একটি শেইপ। বিভিন্ন ফাংশনের জন্য স্বীকৃত শেইপ ব্যবহার করে ভিজ্যুয়াল কন্সিস্টেন্সি বজায় রাখা হয়। ব্যবহারকারীরা জানেন যে রেকট্যাংগল বাটন, কার্ড, ছবি বা ভিডিওগুলির জন্য; আভাটার্স  বা ব্যাজের জন্য সার্কেল পরিচিত; এবং নেভিগেশন বা প্লে বোতামের জন্য অ্যারোস। আপনি যদি চান যে ব্যবহারকারীরা জানুক কীভাবে আপনার ইন্টারফেসটি ব্যবহার করতে হয়, তাহলে কমন সেইপেই থাকুন।

৩. স্পেস (Space)

মহাকাশ কক্ষপথকয়ে অনুকরণ করে বড় এবং ছোট সার্কেল

স্পেস বলতে বোঝায় ডিজাইনের উপাদানগুলির মধ্যে, চারপাশে এবং এমনকি ভিতরের এলাকাকে। ডিজাইন উপাদান দ্বারা গৃহীত কোনো স্পেস্কে পজেটিভ স্পেস বলা হয়।

অন্যদিকে, উপাদানটির চারপাশের এলাকাকে নেটিভ স্পেস বা হুয়াইট স্পেস বলে।

স্পেসের উদ্দেশ্য

হুয়াইট স্পেস ডিজাইনের সাফল্যের জন্য অত্যাবশ্যক এবং নিম্নলিখিত উদ্দেশ্যগুলি অর্জনে সহায়তা করে:

  • রিডেবিলিটি বাড়ায়। হুয়াইট স্পেস কনটেন্ট অনুসরণ এবং স্ক্যান করা সহজ করে তোলে। এটি ডিজাইনকে ঝরঝরে এবং বিশৃঙ্খলামুক্ত করে তোলে।
  • প্রাসঙ্গিক কনটেন্টগুলো খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। এম্পটি স্পেস ব্যবহারকারীদের চোখকে নেভিগেট করে এবং উপাদানটিকে কম গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট থেকে আলাদা করে। নেটিভ স্পেস লোগো, ছবি, পোস্টারে মূল বিষয়বস্তুর উপর জোর দিতে সাহায্য করে।
  • আপনার ডিজাইনকয়ে এলিগেন্ট এবং মিনিমালিস্টিক করে তুলুন। বড় হুয়াইট স্পেস আপনার ডিজাইনকে একটি অভিনব বলরুমের মতো পরিষ্কার এবং প্রশস্ত দেখায়।
  • ভারসাম্য অর্জন করুন। হুয়াইট স্পেস একটি ডিজাইনের অন্যান্য উপাদানগুলির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে এবং ভিজ্যুয়াল স্টেবিলিটি তৈরি করে।

সামগ্রিকভাবে, ডিজাইনে হুয়াইট স্পেসের উদ্দেশ্য হল শৃঙ্খলা এবং স্বচ্ছতার অনুভূতি তৈরি করতে সহায়তা করা। এটি একটি ডিজাইনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলির দিকেও মনোযোগ আকর্ষণ করতে সাহায্য করে।

৪. কালার (Color)

হলুদ, গোলাপী, নীল এবং বেগুনি এর গ্রেডিয়েন্ট

রং বা কালার হল ভিজ্যুয়াল প্রপার্টির অব্জেক্ট যা আলোর প্রতিফলিত, নির্গত বা প্রেরিত তরঙ্গদৈর্ঘ্য দ্বারা নির্ধারিত হয়। সাধারণত রঙকে আমরা আলোর দৃশ্যমান বর্ণালীর বলে চিহ্নিত করি, যা রংধনু রং (লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল, আসমানি এবং বেগুনি) দিয়ে গঠিত।  

রঙকে আমরা হিউ, টিন্ট, টোন, স্যাচুরেশন, ভেলু এবং ব্রাইটনেস দিয়েও বর্ণনা করতে পারি।  

রঙের উদ্দেশ্য

রঙ ডিজাইনে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় ফাংশন পূরণ করে, যেমন:

  • উপাদানের স্টেটসের মাঝে যোগাযোগ রক্ষা করা
  • গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোকে হাইলাইট করা
  • কিছু ভুল হলে ব্যবহারকারীদের সতর্ক করা
  • মুড বুঝাতে সাহায্য করা
  • একটি হায়ারার্কি প্রতিষ্ঠা করা
  • আবেগ জাগানো

৫. টেক্সচার (Texture)

কালারড অ্যাবস্ট্রাক্ট সেটার পার্টিকলেস

টেক্সচার হচ্ছে কোনো পৃষ্ঠতল স্পর্শ করলে কেমন অনুভব হ্য় তার সাথে সম্পর্কিত। ভৌত জগতে, আমরা সাবজেক্টকে স্পর্শ করতে পারি, যেমন, আমরা ফুল, এবং এর পাপড়ির গঠন অনুভব করতে পারি — মসৃণ, পাতলা এবং শিরাযুক্ত। ডিজাইনেও, আমরা ভিজ্যুয়াল প্যাটার্ন, লাইন এবং রঙের সাহায্যে একটি টেক্টাইল ফিলিং এর অনুকরণ করতে পারি — টেক্সচারটি যত ভালো হবে, এটি কেমন অনুভূত হবে তা কল্পনা করা তত সহজ হবে।

টেক্সচারের উদ্দেশ্য

ডিজাইনে, টেক্সচার ভিজ্যুয়াল ইন্টারেস্ট তৈরি করতে, গভীরতা যোগ করতে এবং ডিজাইনকে আরও রিয়ালিস্টিক এবং জীবন্ত করতে ব্যবহার করা হয়।



৬. টাইপোগ্রাফি (Typography)

বড় হাতের এবং ছোট হাতের লেটার "A"

টাইপোগ্রাফিকে আমরা দুইভাবে দেখতে পারি। প্রথমত, এটি প্রিন্টেড টেক্সট স্টাইল এবং এপিয়ারেন্স। দ্বিতীয়ত, এটি প্রিন্ট বা ডিজিটাল ডিজাইনের চাহিদা মেটাতে লেখাকে পাঠযোগ্য এবং সুস্পষ্ট করার শিল্প এবং প্রক্রিয়া।

টাইপোগ্রাফি একটি বিশাল সংখ্যক ক্রিয়াকলাপকে বোঝায়, যথা সিলেকটিং এবং এডজাস্টিং:

  • টাইপফেস (Typefaces)
  • পয়েন্ট সাইজেস (Point sizes)
  • লাইন লেংথ (Line lengths)
  • লাইন স্পেসিং (Line spacing)
  • লেটার স্পেসিং (Letter spacing)
  • কার্নিং (Kerning)

ডিজাইনে টাইপফেস নির্বাচন এবং সাজানোর সময়, ডিজাইনারদের লেজিবিলিটি, রিডেবিলিটি, হায়ারার্কি, কনট্রাস্ট, এবং এলাইনমেন্টের মতো বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করা উচিত।

টাইপোগ্রাফির উদ্দেশ্য

টাইপোগ্রাফি ডিজাইনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদানগুলির মধ্যে একটি। এটা শুধু টেক্সট বোঝানোর একটি টুল নয় বরং ব্র্যান্ড ইমেজ বহন করার এবং ব্যবহারকারীর আবেগকে প্রভাবিত করার একটি শক্তিশালী টুল। টাইপোগ্রাফি ডিজাইনারদের সাহায্য করে:

  • একটি শক্তিশালী ভিজ্যুয়াল হায়ারার্কি স্থাপন করতে যা ব্যবহারকারীদের নেভিগেট করতে সহায়তা করে
  • লেজিবিলিটি এবং রিডেবিলিটি বাড়ায়, প্রোডাক্টকে আরও অ্যাক্সেসিবল করে তোলে
  • মুড সেট করতে
  • একটি ব্র্যান্ডের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ এবং ব্র্যান্ড রিকগনিশন তৈরি করতে

৭. মোশন (Motion)

নীল সার্কুলার লোডিং বার

মোশন বলতে নড়াচড়া এবং অ্যানিমেশন বোঝায় যা ইউজার এক্সপেরিয়েন্স উন্নত করতে এবং প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কে তথ্য আদান-প্রদানে সহায়তা করে।

ডিজাইনে মোশন আপ্লাই করার সময় ডিজাইনারদের কয়েকটি মূল নীতি বিবেচনা করা উচিত:

১. ফাংশন (Function): একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছাড়া মোশন ব্যবহার করবেন না। এটি ইউজার এক্সপেরিয়েন্স বাড়াতে হবে ব্যবহার করা উচিত, কমাতে না

২. কন্সিস্টেন্সি (Consistency): খেয়াল রাখতে হবে মোশনের উপাদানগুলো যাতে কন্সিস্টেন্ট থাকে এবং ভিজ্যুয়াল স্টাইল এবং ব্র্যান্ড পার্সোনালিটির সাথে মিল থাকে

৩. সিম্প্লিসিটি (Simplicity): এমন মোশন উপাদান ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন যা ব্যবহারকারীদের পণ্যের বিষয়বস্তু বা কার্যকারিতা থেকে বিভ্রান্ত করে

মোশন উদ্দেশ্য

  • মোশন একটি স্টেটকে নির্দেশ করে এবং মাইক্রোইন্টারেকশনের জন্য ফিডব্যাক প্রদান করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি অ্যানিমেটেড স্পিনার নির্দেশ করে যে পেইজটি লোড হচ্ছে।
  • এটি ব্যবহারকারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে কারণ আমাদের চোখ চলন্ত বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হয়। উদাহরণস্বরূপ, বাটনে রেডিয়েটিং হ্যালো যুক্ত করা ব্যবহারকারীদের এটিতে ক্লিক করতে উত্সাহিত করে৷
  • এটি একটি পেইজে ব্যবহারকারীদের গাইড করে। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাকর্ডিয়ন এবং অ্যাঙ্কর লিঙ্কগুলোর মসৃণ অ্যানিমেশন ব্যবহারকারীদের পেইজে তাদের অবস্থান বুঝতে সাহায্য করে।
  • এটি ইন্টারঅ্যাকশন নির্দেশ করে, বিশেষ করে মোবাইলে। উদাহরণস্বরূপ, একটি শর্ট অ্যানিমেশন দেখাতে পারে কিভাবে ব্যবহারকারীরা একটি চ্যাট সোয়াইপ করার সময় ডিলিট বা আর্কাইভ করতে পারে।
  • এটি একটি ব্র্যান্ডকে স্মরণীয় করে তোলে এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে আরও আনন্দদায়ক করে তোলে।

ডিজাইনের উপাদান এবং নীতিগুলি কীভাবে আলাদা

উপরে বর্ণিত ডিজাইন উপাদানগুলো যে কোনও কম্পোসিশনের বিল্ডিং ব্লক। ডিজাইনের নীতিগুলোর সাথে তাদের গুলিয়ে ফেলবেন না। ডিজাইনের নীতিগুলি ডিজাইনারদের একটি পেইজে উপাদানগুলো সবচেয়ে যৌক্তিক, কার্যকরী এবং আকর্ষণীয় পদ্ধতিতে সাজাতে সাহায্য করে।

কি? ডিজাইন ইলিমেন্ট সম্পর্কে জানলেন তো? Now Just Practice!

এখনই শুরু করে দিন আপনার UI/UX ডিজাইন জার্নিটা। ভালো ডিজাইন ফাউন্ডেশন, ডিজাইন সেন্স, কোনো একটি স্পেসিফিক নিশ- এ দক্ষ হবার এখনই তো সময়।

হ্যাপি ডিজাইনিং…