বর্তমানে চাহিদার শীর্ষে থাকা অন্যতম একটি ক্যারিয়ার ট্র্যাক হচ্ছে প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট। অনেকেই এটি নিয়ে আগ্রহী হলেও প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে একদম অজানা কিংবা অল্পসল্প জানেন। যা একটি কোম্পানির হৃদপিন্ড হিসেবে কাজ করে থাকে। প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট বা পণ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কেই জানতে পারবেন আজকের আর্টিকেলে।
প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট আসলে কী?
প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট বা পণ্য ব্যবস্থাপনা হল একটি প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস তৈরি করার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে এর ডেভেলপমেন্ট, বাজারে চালু করা এবং পরিচালনা করার একটি ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া। এটি মূলত পণ্যের পুরো লাইসাইকেলকে চালনা করে থাকে। পণ্য ব্যবস্থাপণা মূলত তিনটি বিষয় নিয়ে গঠিত -
- ব্যবসা- ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করার জন্য পাশাপাশি টেকসই এবং দীর্ঘমেয়াদি পণ্য সাফল্য নিশ্চিত করার সাথে সম্পর্কিত হল প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট। ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রোডাক্ট ম্যানেজারদের অবশ্যই বিজনেস কনটেক্স সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে, একটি প্রোডাক্ট তৈরির প্রাথমিক পর্যায় থেকে বাজারজাত করা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং স্ট্রাটেজিক গোল অনুযায়ী কাজগুলো আগাচ্ছে কিনা দেখতে হবে।
- টেকনোলজি- প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্টের সাথে সম্পর্কিত টেকনোলজির গতিশীলতা এবং এর ডেভেলপমেন্ট ও পরিচালনার সাথে যেসকল বিষয়গুলো জড়িত তা বুঝতে হবে এছাড়াও প্রযুক্তিগত মৌলিক বিষয়গুলো জানতে হবে এবং শুধুমাত্র জানলেই হবে না এর পাশাপাশি ভালোভাবে বুঝতেও হবে। প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট এভাবেই একটি পণ্য সম্পর্কে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
- গ্রাহকের এক্সপেরিয়েন্স- প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট সর্বদা গ্রাহকের ডিমান্ড এবং পণ্য ব্যবহারের এক্সপেরিয়েন্সকে গুরুত্ব দেয়। প্রোডাক্টটি গ্রাহককে সঠিকভাবে এবং ভালো সার্ভিস দিচ্ছে কিনা, গ্রাহকের চাহিদা ঠিকঠাকভাবে পূরণ করতে পারছে কিনা এই বিষয়গুলো বেশ ভালোভাবে লক্ষ্য রাখে।
শুরুর ইতিহাস
একটু পেছনে ফেরা যাক। নিল ম্যাকেলরয়, পেশায় একজন অ্যাডভার্টাইজিং ম্যানেজার, প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল (পিএন্ডজি)-কে 'ব্র্যান্ড ম্যান'-এর একটি আইডিয়া দিয়েছিলেন। একজন 'ব্র্যান্ড ম্যান’ এর কাজ হবে
একটি পণ্যের ব্র্যান্ড, ম্যানেজমেন্ট এবং সুনাম ধরে রাখা। ম্যাকেলরয় মনে করতেন যে ব্র্যান্ড ম্যানেজারদের যে পণ্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে সম্পূর্ণভাবে পণ্যের পরিকল্পনা করতে হবে এবং সেই পণ্য সম্পর্কিত সকল বিষয়ে নিজেকে দায়বদ্ধ থাকতে হবে। সময়ের সাথে সাথে, সফ্টওয়্যার মার্কেট দ্বারা ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্টের নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন আসতে শুরু করে। ১৯৮০ এর দশক জুড়ে ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্টের জনপ্রিয়তা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছিল। অনেক প্রযুক্তি সংস্থা ব্র্যান্ড ম্যানেজার নিয়োগ শুরু করে এবং তাদের পণ্য এবং এর বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ছিল। এই ব্র্যান্ড ম্যানেজাররাই পরবর্তীতে উদ্যোক্তা এবং প্রোডাক্ট লিডার হয়ে উঠেন। উদাহরণস্বরূপ, স্কট কুক P&G-এর ব্র্যান্ড ম্যানেজার থেকে Intuit-এর প্রতিষ্ঠাতা , Quickbooks-এর মতো অ্যাকাউন্টিং সফ্টওয়্যার প্রোডাক্ট ডেভেলপ করেন। তবে যাইহোক, প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে এই সেক্টরে বেড়েছে কিছু চ্যালেঞ্জও।
প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্টের মূল লক্ষ্যগুলো কী কী?
পণ্য ব্যবস্থাপণার তিনটি মূল লক্ষ্য রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে-
১. একবার পণ্য তৈরি করে বারবার বিক্রি করা- প্রোডাক্ট ম্যানেমেন্টের মাধ্যমে একটি পণ্য তৈরি করে একবার মাত্র বিক্রি করতে পারবেন না বরং বারবার বিক্রি করতে পারবেন যা আপনার বিজনেসের প্রফিটাবিলিটি অনেকগুণ বাড়িয়ে দিবে।
২. মার্কেট এক্সপার্ট হওয়ার পাশাপাশি প্রোডাক্ট এক্সপার্ট হয়ে ওঠা- পণ্য ব্যবস্থাপণা একটি পণ্য বা প্রোডাক্ট এমনভাবে উৎপাদন করে যাতে কাস্টমার সেটি অবশ্যই কিনে নেয়।
৩. ব্যবসার মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়া- প্রোডাক্ট ম্যানেমেন্টের মাধ্যমে একটি প্রোডাক্টের বিভিন্ন দিকগুলোর খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানতে পারা যায় ফলে প্রোডাক্টটি তৈরিতে নিজস্ব মতামত দেওয়ার পাশাপাশি নেতৃত্বের দারুণ সুযোগ পাওয়া যায়।
প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট লাইফ সাইকেল
একটি প্রোডাক্টের প্ল্যানিং থেকে শুরু করে বাজারজাত করার সময় পর্যন্ত প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্টের যে ধাপগুলো পার করতে হয় সেই ধাপগুলোর সমন্বয় হচ্ছে প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট লাইফ সাইকেল। তবে এই ধাপগুলো একটি কোম্পানির একটি মাত্র টিমই যে পরিচালনা করে তা কিন্তু নয় বরং কয়েকটি টিম একসাথে হয়ে এই কাজগুলো সম্পন্ন করে থাকে।
এই সাইকেলের ৬ টি ধাপ রয়েছে-
- উদ্ভাবন
- অ্যানালাইসিস
- ডেভেলপমেন্ট
- গো-টু-মার্কেট
- ইন-লাইফ
- এন্ড অফ লাইফ
উদ্ভাবন
উদ্ভাবন পর্যায়ে, নতুন আইডিয়া সংগ্রহ কিংবা জেনারেট করা হয়। যে আইডিয়াটি সবচেয়ে বেশি ইন্টারেস্টিং এবং কাস্টমারের চাহিদা মেটাতে পারবে বলে মনে হয় সেটি বেছে নেওয়া হয়। এটিকে পণ্যের আবিস্কারের ধাপও বলা যায়। যদি মনে হয় আইডিয়াটি সফল হবে তবে পরবর্তী ইনভেস্টিগেশন শুরু করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
অ্যানালাইসিস
দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে যে পণ্য তৈরির আইডিয়াটি আছে তা অ্যানালাইসিস করা। মার্কেটে আসলেই পণ্যটির চাহিদা আছে কিনা, থাকলেও কী কী রিকোয়ারমেন্ট আছে এবং পণ্যেটি তৈরির জন্য ইনভেস্টমেন্ট করা আদৌ ঠিক হবে কিনা এসকল বিষয় গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। অনেক বড় বড় কোম্পানি, ডেভেলপমেন্ট স্টেজে যাওয়ার পূর্বেই একটি পণ্য তৈরির আইডিয়া বাতিল করে দেয় যদি অ্যানালাইসিস করে মনে হয় পণ্যটি লাভজনক নয়।
ডেভেলপমেন্ট
ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে তৃতীয় ধাপ। এই ধাপে পণ্যের ডিজাইন করা হয়,পণ্যটি তৈরি করা হয় এবং প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করে দেখা হয়। অ্যাজাইল সফটওয়্যারের সাহায্য নিয়ে এটি সম্পন্ন করা হয়ে থাকে।
গো-টু-মার্কেট
গো-টু-মার্কেট পর্যায়ে, কোম্পানি ট্রায়াল চালিয়ে, প্রস্তাব চূড়ান্ত করে এবং কোম্পানি পণ্য বিক্রি করতে প্রস্তুত তা নিশ্চিত করে এবং বাজারে চালু করে। উচ্চ-ঝুঁকির পণ্য তৈরিকারী কোম্পানি, এই ধাপ সম্পন্ন করতে অনেক মাস সময় নিতে পারে। অন্যান্য কোম্পানির জন্য যেমন যারা অনলাইন ওয়েব-ভিত্তিক পণ্য তৈরি করে, পর্যায়টি কয়েক মিনিটের মধ্যে সম্পন্ন হয়।
ইন- লাইফ
একবার পণ্যটি বাজারে চালু হলে এটি ইন-লাইফ ধাপে চলে আসে। এই ধাপে পণ্যের বিক্রয়, পারফর্মেন্স ট্র্যাকিং, এবং কোনো সমস্যা থাকে তা সমাধানের উপর ফোকাস করা হয়। পণ্যের সমস্যা সমাধান করার মাধ্যমে এই ধাপে একটি পণ্যের অনেক সংস্করণ বের করা হতে পারে।
এন্ড অফ লাইফ
যখন পণ্যটির প্রয়োজনীয়তা বিলীন হয়ে যায় তখন এটি এর শেষ ধাপ অর্থাৎ এন্ড অফ লাইফ ধাপে চলে আসে।
এই ছিল প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্টের আদ্যপান্ত। আশা করি, প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে আপনাদের যথেষ্ট ধারণা দিতে পেরেছি।
References:
- https://www.productplan.com/learn/what-is-product-management/
- https://www.futurelearn.com/info/courses/product-management-essentials/0/steps/253370
- https://www.productfocus.com/product-management-basics/what-is-product-management/